টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে ব্যবসায়ীরা চান এক্সিট পলিসি

গ্যাস সংকট, এর মধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, ভ্যাট বৃদ্ধি, কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি, ডলারের দাম বৃদ্ধি; অন্যদিকে বিক্রয় (সেলস ড্রপ) কমে যাওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, চলমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এই অবস্থায় ব্যবসা থেকে বের হওয়ার নীতি অর্থাৎ এক্সিট পলিসি চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রোবরার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের সেলস ড্রপ করেছে, ঋণের উচ্চ সুদ হার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। চাহিদামতো এলসি ওপেন করা যাচ্ছে না, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭.৬৬ শতাংশ। নতুন সংযোগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আবার আইএমএফ-এর সুপারিশে বিভিন্ন পণ্যের উপর কর/মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি আমাদের বর্তমান শিল্প টিকিয়ে রাখতে হবে। আর শিল্প টিকে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার কোনো সমস্যা হবে না।

বিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের কোনো এক্সিট পলিসি নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, আমরাও মনে করি এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। আর এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এটা দ্রুত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হবে।

বিসিআই সভাপতি আরো বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের নগদ সহায়তা পেতে আবেদনের পর ৯ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগছে। যার ফলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো তাদের অপারেশন কষ্ট মেটানো, তাদের কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। আমরা মনে করি নগদ সহায়তা প্রদানের সময়সীমা ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে নামিয়ে আনা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ব্যাংকের সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমার মনে হয় এটা আগের মতো ৩৫ শতাংশে উন্নীত করা উচিত। আমরা ঋণ খেলাপির ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়ার প্রস্তাব করেছি। কারণ মার্চ থেকে কোনো গ্রাহক তিন মাস কিস্তি না দিলে খেলাপি হয়ে যাবে। তাই এটাকে ৩ মাসে না এনে ৬ মাস রাখার প্রস্তাব করেছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিসিআই এর প্রতিনিধিদলের বক্তব্য শোনেন এবং বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য এখন মুদ্রাস্ফীতি কমানো। আমরা আশা করি আগামী জুন নাগাদ মুদ্রাস্ফীতি ৭-৮ এর মধ্যে নেমে আসবে। আমাদের বেসরকারি খাতকে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। আমরা সরকারি ব্যয় কমানোর জন্য সুপারিশ করছি। যাতে বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ বাড়াতে পারি। কিন্তু ডিপোজিট বাড়ছে না। ডিপোজিট গ্রোথ ৭ শতাংশ। অর্থ প্রবাহ বাড়াতে হলে ডিপোজিট বাড়াতে হবে। বর্তমানে ডলারের ক্রাইসিস নেই। অর্থনীতি স্বাভাবিক হচ্ছে কিন্তু একটু সময় লাগবে। আগামী রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত না হয় সে দিকে আমাদের লক্ষ্য আছে এবং আমরা সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি মনে করি দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড মার্কেটে যেতে হবে। আমাদের করপোরেট বন্ডের জন্য কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবে।

[news_photocard_button text="ফটোকার্ড দেখুন "]