মণিপুর ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের পরিকল্পনা

মণিপুরে অস্ত্রের মুখে নারীদের বিবস্ত্র হয়ে হাঁটতে বাধ্য করা এবং ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতি। বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভের কারণে ভারতের পার্লামেন্টের লোকসভা-রাজ্যসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে, যা শুরু হয়েছে গত ১৮ জুলাই।

সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মণিপুর ইস্যুতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছে ভারতের বিরোধী দলগুলোর জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইনডিয়া)।

প্রসঙ্গত, ভারতের জনজাতি অধ্যুষিত উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতি জনগোষ্ঠীকে গত ৩ মে সাংবিধানিকভাবে তফসিলি জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেন মণিপুর হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই ঘোষণার পরই জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয় মেইতি ও আদিবাসী কুকি ও চিন জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

পরের দিন ৪ মে রাজধানী ইম্ফল থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের জেলা থৌবলে পুলিশের হেফাজত থেকে তিন নারী ও দুই পুরুষকে ছিনিয়ে নেয় ৫০০ জন সশস্ত্র দাঙ্গাকারী। তারপর ঘটনাস্থলেই দুই পুরুষকে হত্যার পর ৩ নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটতে বাধ্য করে দাঙ্গাকারীরা এবং তাদেরকে একটি মাঠের কাছে নিয়ে গিয়ে একজন নারীকে গণধর্ষণ করা হয়।

হত্যা ও নিগ্রহের শিকার নারী-পুরুষরা সবাই ছিলেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের। অন্যদিকে দাঙ্গাকারীরা ছিলেন বিজেপির সমর্থক মেইতি গোষ্ঠীর।

গণধর্ষণের শিকার ওই নারী এই ঘটনার পরপরই থানায় মামলা করেছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, ঘটনা বিশদভাবে জানার পরও এ ব্যাপারে কেনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ।

এদিকে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদেরকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর দৃশ্য ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয় বিজেপির বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘রহস্যজনক’ নীরবতা সেই সমালোচনাকে আরও তীব্র করে তোলে। গত ১৮ জুলাই পার্লামেন্টে বর্ষাকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে বিরোধী দলগুলো। বস্তুত, বিরোধীদের বিক্ষোভের কারণে গত এক সপ্তাহে কোনো দিনই অধিবেশন সম্পূর্ণ করা যায়নি।

এই পরিস্থিতিতে চাপ এড়াতে কয়েকদিন আগে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার এই প্রতিশ্রুতি প্রদানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেইে এক অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের প্রায় সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে।

গতকাল ২৪ জুলাই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই ইস্যুতে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন।

কিন্তু তারপরও বিক্ষোভ থামছে না বিরোধীদের। তাদের প্রতিবাদের কারণে মঙ্গলবারও দুপুর ১২ টার দিকে অধিবেশন মুলতবি করতে বাধ্য হয়েছেন লোকসভা ও রাজ্যসভার দুই স্পিকার।

এর মধ্যেই জানা গেল, বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় বিজেপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছে ইনডিয়া।