সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ ‘গ্র্যান্ড মুফতি’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ শায়খ সালেহ আল-ফাওযান। পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের জারি করা রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পান।
বুধবার (২২ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী ও ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের সুপারিশে জারি করা এ ফরমান অনুযায়ী, শায়খ ফাওযানকে একই সঙ্গে সৌদি আরবের সিনিয়র আলেম পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইফতা ও গবেষণাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সম্প্রতি প্রয়াত গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ আল-শেখের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন, যিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন।
শায়খ সালেহ আল-ফাওযান দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের ধর্মীয় অঙ্গনে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তিনি পূর্বে সিনিয়র আলেম পরিষদ ও ইফতা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি মুসলিম বিশ্ব লীগের অধীন ইসলামিক ফিকহ কাউন্সিলের সদস্য এবং হজ মৌসুমে দায়িত্বরত দাঈদের তত্ত্বাবধায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৩৫ সালে সৌদি আরবের কাসিম অঞ্চলের আশ-শিমাসিয়াহ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন শায়খ ফাওযান। শৈশবে পিতৃহীন হলেও পরিবারের সহযোগিতা ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম শায়খ হাম্মুদ বিন সুলায়মান আত-তিলালের তত্ত্বাবধানে তিনি শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ছোটবেলা থেকেই কুরআন তিলাওয়াত ও প্রাথমিক ইসলামি শিক্ষা অর্জন করেন।
১৯৫০ সালে সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করে ১৯৫২ সালে বুরাইদার আল-ফয়সালিয়া স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর ১৯৫৪ সালে বুরাইদার ইসলামি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। চার বছর পর স্নাতক শেষে তিনি রিয়াদের শরিয়াহ কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৬১ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ফিকহ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল যথাক্রমে ‘ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে অনুমানভিত্তিক অনুসন্ধানের প্রয়োগ’ এবং ‘ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী খাদ্য সংক্রান্ত বিধান’।
তিনি হায়ার ইনস্টিটিউট অব জুডিশিয়ারির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯২ সালে স্থায়ী ইফতা কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। এছাড়া তিনি বহু ইসলামী গ্রন্থের প্রণেতা এবং সুপরিচিত রেডিও অনুষ্ঠান ‘নূর আলা আল-দার্ব’-এর নিয়মিত আলোচক হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
শায়খ সালেহ আল-ফাওযানের নিয়োগের মধ্য দিয়ে সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতৃত্বে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। তাঁর জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও ইসলামি চিন্তাধারার গভীরতা দেশটির ধর্মীয় অঙ্গনে স্থিতিশীলতা ও ঐতিহ্যের ধারাকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।





