সংবাদপত্র ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য সরকারি সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। তার মতে, গণমাধ্যম মালিকদেরও সাংবাদিকদের কল্যাণে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
সাংবাদিকদের বেতন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা জানান, সরকার সাংবাদিকদের প্রাথমিক নিয়োগে একটি ন্যূনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে। যেসব গণমাধ্যম এই ন্যূনতম বেতন মানবে না, তারা কোনো ধরনের সরকারি সুবিধা পাবে না।
তিনি আরও জানান, সরকার বেসরকারি টেলিভিশনের সম্প্রচার ব্যবস্থা ডিজিটাইজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে কোন চ্যানেলের কত দর্শক রয়েছে, তা পরিস্কারভাবে জানা যাবে। ভালো পারফরমেন্সের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপনের সুযোগ বাড়বে, যা আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
নতুন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যমান নীতিমালা মেনে নতুন চ্যানেল অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। সরকার ইতিবাচক প্রতিযোগিতা চায়, তাই নতুন গণমাধ্যম অনুমোদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম জানান, কমিশন প্রস্তাবিত ২৩টি আশু করণীয়ের মধ্যে ১৩টির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলছে। এগুলো বাস্তবায়নে নীতিমালা ও অধ্যাদেশ প্রণয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। কিছু ক্ষেত্রে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া ভেটিংয়ে রয়েছে। ভেটিং শেষে দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। গণমাধ্যম কর্মী আইন এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের নীতিমালা প্রণয়নও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।
অনলাইন মিডিয়া ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, যেসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কনটেন্ট প্রচার করে আয় করছে, তাদের রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগ একযোগে কাজ করছে।
পত্রিকার প্রচারসংখ্যায় অসঙ্গতির বিষয়ে তিনি জানান, গত তিন মাসে ডিএফপি অধিকাংশ পত্রিকার প্রচারসংখ্যা পর্যবেক্ষণ করেছে। অনেক পত্রিকা প্রতিদিন মাত্র ৫০০ থেকে ১০০০ কপি ছাপে। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রচারসংখ্যা যৌক্তিকভাবে কমানো হবে এবং বিজ্ঞাপন হার দ্বিগুণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থায়ী গণমাধ্যম কমিশন প্রতিষ্ঠায় সময় প্রয়োজন, কারণ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মপরিধি নতুনভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
গুজব প্রতিরোধে প্রতিটি গণমাধ্যমে ফ্যাক্টচেকিং টিম গঠন প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকতার নৈতিকতা রক্ষায় কপিরাইট মেনে সংবাদ পরিবেশন অপরিহার্য। তিনি জানান, অসংখ্য ওয়েবসাইট কপিরাইট লঙ্ঘন করে অন্য মিডিয়ার সংবাদ হুবহু ব্যবহার করছে, যা বন্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।





