‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করে’

২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরুর দিকে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মুগদা থানাধীন মাণ্ডায় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের আবাসিক প্রকল্প ‘গ্রিন মডেল টাউন’ এ স্থায়ী ক্যাম্পাসে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ কামালুদ্দীন আবদুল্লাহ জাফরীর আবেদনক্রমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন প্রদান করেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আইন বিভাগ ও ইংরেজী বিভাগ তথা চারটি বিভাগ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। স্বনামধন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ণ, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে শাইনিংবাংলার সাথে কথা বলেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আমিনুল হক ভূইয়া।

শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই:

আমাদের ৪টি বিভাগ রয়েছে। ব্যবসায় প্রশাসন, ইসলামিক স্টাডিজ, আইন ও ইংরেজী বিভাগ। প্রত্যেক বিভাগের বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ তাঁর সহকর্মীদেরকে নিয়ে অত্যন্ত সুচারুরূপে বিভাগগুলোর একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রত্যেক বিভাগের কারিকুলাম ওবিই টেমপ্ল্যাট অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তা যথাযথভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে অনুমোদনের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সেগুলোর প্রাথমিক অনুমোদনও দিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা কি কারণে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে?

এটা অত্যন্ত সত্য যে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষক ছিলাম। এছাড়াও ইতোপূর্বে আমি একটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করেছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, সর্বক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতামূলকভাবে মেধার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা প্রাপ্তির ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীরা তাদের কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্খিত বিষয়ে পড়াশুনা করে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ভিন্নরূপ, সেটি হলো, ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা ক্লাস হয়। যেদিন মেয়েদের সকালের শিফটে ক্লাস হয়, সেদিন ছেলেদের বিকালের শিফটে ক্লাস হয় আর যেদিন মেয়েদের বিকালের শিফটে ক্লাস হয়, সেদিন ছেলেদের সকালের শিফটে ক্লাস হয়। শালিনতা বজায় রেখে মেয়েরা যেকোন পোষাক পড়তে পারে। এখানে একাডেমিক আচরণ ও  পোষাকের কোন বৈষম্য নেই। এটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের ছেলে-মেয়েরাও স্বাচ্ছন্দের সাথে পড়াশুনা করছে। তাদের সংখ্যা ২০ জনের অধিক।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট চারটি ডিপার্টমেন্ট আছে। সামনে আরও কোন ডিপার্টমেন্ট যুক্ত করা হবে কি না?

ইনশাআল্লাহ, হবে। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সভায় কম্পিউটার সাইন্স এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস এণ্ড ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিউট্রিশন এণ্ড ফুড সাইন্স, পাবলিক হেল্‌থ, ব্যাচেলর অব এডুকেশন ও   ইন্সটিটিউট অফ মডার্ণ ল্যাঙ্গুয়েজ খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এ সব বিভাগের কার্যক্রম চালু হবে, ইনশাআল্লাহ।

লোকমুখে শোনা যায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িকতার একটা ট্যাগ লাগানো আছে! এই বিষয়টা কিভাবে দেখেন?

অতীতে এই বিশ্ববিদ্যালয় কি রূপ ছিল তা আমি জানিনা। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি এবং এটাই আমার আদর্শ। আর সেজন্যেই আমি এখানে এসে প্রথমেই বঙ্গবন্ধু  ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার প্রতিষ্ঠা করেছি। ইতোমধ্যেই এখানে বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্ণামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খেলাধূলা চলছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনৈতিক সচেতনতা, ক্যাম্পাস বহির্ভূত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তাদের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার বটে। তবে এখানে কোনো সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের অবস্থান নেই এবং সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রেখেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।

-বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষা বান্ধব ক্যাম্পাস। এখানে সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরো জোরালো করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মেইনগেইটে নিরাপত্তা চৌকি উদ্বোধন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি নিরাপত্তার প্রশ্নে সজাগ ও সচেতন রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

– শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকেই প্রতিভার অধিকারী। তারা তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাবে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করবে, মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করবে এবং একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে দেশ ও বিদেশে সুনামের সঙ্গে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখছে এবং রাখবে-সেই প্রত্যাশাই রইলো।