পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম পথপ্রদর্শক ও প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার ওয়াজির মোহাম্মদ আর নেই। ৯৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি। তার মৃত্যুতে পাকিস্তান ক্রিকেটে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশের ক্রিকেটের সূচনালগ্নে অবদান রাখা বিখ্যাত “মোহাম্মদ ব্রাদার্স” পরিবারের আরেক সদস্যকে হারাল ক্রিকেটবিশ্ব।
ওয়াজির মোহাম্মদ পাকিস্তানের হয়ে ২০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে দুটি সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৮০১ রান। মূলত লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করলেও তার গড় ছিল প্রশংসনীয় -২৭.৬২। পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রাথমিক যুগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলের অবস্থান শক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
তার ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি ছিল ১৯৫৪ সালের ওভাল টেস্ট। ইংল্যান্ড সফরে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়ে পাকিস্তান, আর সেই ঐতিহাসিক জয়ে ছিল ওয়াজিরের লড়াকু ইনিংসের অবদান। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান যখন মাত্র ৮৫ রানে এগিয়ে এবং হাতে মাত্র দুই উইকেট, তখন জুলফিকার আহমেদের সঙ্গে ৫৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন ওয়াজির। শেষ পর্যন্ত চার ঘণ্টার লড়াইয়ে অপরাজিত ৪২ রানে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। পাকিস্তান সেই ম্যাচ জেতে ২৪ রানে।
দুই বছর পর, ১৯৫৬ সালে করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেক দারুণ ইনিংস খেলেন তিনি। ৭০ রানে ৫ উইকেট হারানো অবস্থায় অধিনায়ক আব্দুল হাফিজ কারদারের সঙ্গে ১০৪ রানের জুটি গড়ে দলকে উদ্ধার করেন। সেই ম্যাচে পাকিস্তান জয় পায় ৯ উইকেটে, আর ওয়াজির করেন ৬৭ রান।
১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। বিখ্যাত সেই সিরিজে গ্যারি সোবার্স করেছিলেন ৩৬৫ রানের বিশ্বরেকর্ড ইনিংস, আর পাকিস্তানের হানিফ মোহাম্মদ করেছিলেন ৩৩৭ রান। সেই ইনিংসেও ওয়াজির ও হানিফের শতরানের জুটি ছিল স্মরণীয়। পুরো সিরিজে তিনি দুইটি সেঞ্চুরিসহ ৪৪০ রান করেন, যার একটি ছিল ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্রুততম শতরান।
ওয়াজির মোহাম্মদ শুধু একজন ক্রিকেটারই নন, তিনি ছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেটের ভিত্তি স্থাপনকারীদের একজন। তার সংগ্রামী ইনিংসগুলো আজও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে আছে পাকিস্তান ক্রিকেটে।





