পালিয়েছে প্রেসিডেন্ট আসাদ, বিদ্রোহীরা বলছে সিরিয়া এখন মুক্ত

সিরিয়ার ‘স্বৈরশাসক’ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং সিরিয়া এখন মুক্ত বলে ঘোষণা করেছে দেশটির বিদ্রোহীরা।

এর আগে জানা যায়, সিরিয়ার দুইজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিলো, প্রেসিডেন্ট আসাদ অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে গেছেন।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামিক সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা এই অভিযানের নেতৃত্বে আছে তাদের টেলিগ্রাম হ্যান্ডেলে বলেছে, এর মাধ্যমে একটি অন্ধকার যুগের অবসান ঘটেছে, এবং এক নতুন যুগের সূচনা ঘটেছে।

দামেস্কের পথে পথে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে উল্লাস করতে দেখা গেছে।

বিদ্রোহীরা বলছে, আসাদ সরকারের নিপীড়নের শিকার শত শত মানুষ যারা কারাবন্দি ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন তারা এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারেন।

এদিকে, রাজধানীর সবচেয়ে বড় কারাগার সেদনায়া থেকে হাজার হাজার বন্দিকে মুক্ত করেছে বিদ্রোহীরা।

সিরিয়া বিভিন্ন শহর থেকে হেজবুল্লাহ বাহিনী তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করেছে।

এই পরিস্থিতিকে একজন বিশ্লেষক ‘৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের চূড়ান্ত মূহুর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বিদ্রোহীরা দামেস্কে প্রবেশ করতে শুরু করেছে- এমন ঘোষণা দেয়ার পরপর প্রেসিডেন্টের দেশ ছাড়ার খবর পাওয়া যায়, কিন্তু শুরুতে সে খবর অস্বীকার করা হয়েছিল।

তিনি চলে যাওয়ার পর বিমানবন্দর থেকে সরকারি বাহিনী সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে একটি ব্যক্তিগত বিমান দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড়ে গেছে এবং ‘সম্ভবত এতেই প্রেসিডেন্ট আসাদ ছিলেন’।

রাজধানীতে প্রবেশ শুরুর আগে বিদ্রোহীরা দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

দামেস্কে প্রবেশের ঘটনাকে বিদ্রোহী ইসলামপন্থী হায়াত তাহরির আল-শামস বা এইচটিএস এর প্রধান ‘ঐতিহাসিক মূহুর্ত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

“আমাদের বাহিনী রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করতে শুরু করেছে,” বিদ্রোহীরা তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছে। বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্কে একটার পর একটা শহরতলীর পতন হচ্ছে।

এদিকে, দামেস্কের প্রাণকেন্দ্র উমায়াদ স্কয়ারে লোকজন উৎসব শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই এলাকাতেই সেখানকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর দপ্তরসহ সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যালয়।

জাতিসংঘ একসময় ‘মনুষ্য জবাইখানা’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলো এমন একটি কারাগার থেকে বন্দিদের মুক্ত করেছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা।

সেদনায়ার ওই কারাগারে হাজার হাজার বিরোধী সমর্থককে ফাঁসি ও নির্যাতনের অভিযোগ আছে।

টেলিগ্রাম চ্যানেলে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস বলেছে বন্দিদের মুক্ত করে তারা একে ‘অবিচারের যুগের অবসান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

কিছু ভিডিওতে কারাগার থেকে লোকজনকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। তবে এগুলোর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

দ্যা এসোসিয়েশন অফ ডিটেইনিস অ্যান্ড দা মিসিং ইন সেদনায়া প্রিজন বলেছে মুক্ত হওয়া বন্দিরা দামেস্কের কাছেই একটি শহর মানিনের দিকে যাচ্ছে।

অপরদিকে, প্রেসিডেন্ট আসাদ বিদায় নিলে বহু মানুষ খুশী হিবে কিন্তু এরপরই একটি প্রশ্ন নিশ্চিতভাবে আসবে যে এরপর কী হবে।

এবারের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসলামপন্থী বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত এইচটিএস, যাদের রুট হলো আল-কায়েদা।

বহুবছর ধরেই তারা তাদেরকে জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে পরিচিত করানোর চেষ্টা করছে। তবে অনেকেই এটা মানতে রাজী নন।

তাদের মতে গ্রুপটি এখনো চরমপন্থী সহিংস একটি সংগঠন এবং সে কারণেই এরপর দেশটিতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সহযোগী হেজবুল্লাহ সিরিয়ার নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে তাদের সৈন্যদের সরিয়ে নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে যে তারা হোমস ও দামেস্ক শহর থেকে সৈন্যদের প্রত্যাহার করছে।

ওদিকে রয়টার্স জানিয়েছে লেবানন সীমান্তের কাছে সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুসেইর শহর থেকেও হেজবুল্লাহ যোদ্ধারা সরে যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা দ্যা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) খবর দিয়েছে যে সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা বাহিনীর শত শত সদস্য তাদের সামরিক পোশাক খুলে ফেলেছে।

এর আগে তাদের বলা হয়েছে যে সরকারের পতন হয়েছে এবং তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

একটি ব্যক্তিগত বিমান চলে যাওয়ার পর একই ধরনের আদেশ দামেস্ক বিমানবন্দর এলাকায় থাকা সরকারি বাহিনী সদস্যদেরও দেয়া হয়েছে।।

[news_photocard_button text="ফটোকার্ড দেখুন "]